ছবির ছেলেটার নাম মানিক। বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলো আমাদের সাথে। ২৩ বছর আগের রমজানে মাসে তাঁকে দেখা গিয়েছে বুয়েট মাঠে, রোজা থেকেও ফুটবল নিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
লাইফের একট আইরনি হচ্ছে, অনেকেই মনে করে, এইচ এস সি পাশ করে ভালো কোথাও ভর্তি হলেই লাইফ সেট হয়ে গেলো। কিন্তু জীবন যে কতবার কত ভাবে রং বদলায়! বুয়েটে ভর্তি হয়ে আমার এই বন্ধুটি যেনো তাঁর পড়াশুনার সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলো।
বুয়েটে ন্যাভাল আর্কিটেকচার এন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (NAME) ডিপার্টমেন্ট এ ভর্তি হলেও সমুদ্র নয়, আকাশ ছিলো তাঁর ধ্যানজ্ঞান। সারাদিন ফুটবল খেলা, আর আকাশে কাগজের প্লেন উড়ানো ছিলো তাঁর টাইম পাস। পড়াশোনার প্রতি কোন আগ্রহ তাঁর ছিলো না, মনে হতো বুয়েটে সে এসেছে শুধুই ঘুরে বেড়াতে।
আমরা বহু আগে পাশ করে বের হলেও, সে তাঁর ডিগ্রি কমপ্লিট করতে পারেনি দীর্ঘদিন। তবে সে কিন্তু তাঁর প্যাশন নিয়েই ছিলো!
এরমধ্যেই ড্রোন নির্মাতা হিসাবে সে নাম করেছে। এয়ারফোর্স এর সাথে সিমুলেশন নিয়ে কাজ করেছে। দেশে একটা এরোস্পেস কোম্পানীও চালায়।
কিন্তু কোন সার্টিফিকেট ছিলো না। বুয়েটে ভর্তি হয়েও ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট তাঁর নেয়া হয়নি ১৬/১৭ বছর।
কোন এক স্যার তাঁকে একদিন বলেছিলেন – ‘তুমি একটা মুদির দোকান দেও, এছাড়া তোমার কোন উপায় নেই’!!! অতঃপর ডিপার্টমেন্ট এর ১২/১৩ বছরের ছোট ভাইদের সাথে তাঁর গ্রাজুয়েশান শেষ হয়।
কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়, বরং কেবল শুরু …
এখন সে চান্স পেয়েছে নাসার এক রিসার্চ প্রজেক্টে কাজ করার! নাসা আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে জিরো এমিশনের কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট বানাতে চায়, এই জন্যে কার্বনলেস ইলেক্ট্রিক এভিয়েশন প্রজেক্টে ৮ মিলিয়ন ডলারের বাজেট অনুমোদন দিয়েছে।
টেনাসী টেক ইউনিভার্সিটির ইঞ্জনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রকৌশলীরা এই রিসার্চ প্রজেক্ট টি করছে। সেখানেই ডাক পেয়েছে আমার এই নিভৃতচারী, বিনয়ী, পাগলাটে ক্লাসমেট বন্ধুটি। তাঁকে আগামী স্প্রিং সেমিষ্টারে পিএইচডি অফার করা হয়েছে নাসার এই প্রজেক্টে।
নিজের প্যাশনের প্রতি একাগ্রতা আর ক্রেজিনেসের পুরস্কার সে পেয়েছে। এত বড় সুসংবাদ পেয়েও সে প্রায় কাউকেই জানায়নি, চেপে রেখেছিলো এই খবর।
জীবনে সাক্সেসের পিছনে না ছুটে এক্সেলেন্সে ধ্যান দিয়ে বাজিমাত করার গল্প শুধু ‘থ্রী ইডিয়টস’ মুভি তেই ঘটে না, বাস্তব জীবনেও ঘটে!
সংগৃহীত Author – Tashfik Islam